শ্রীলঙ্কাই বিশ্বের একমাত্র দেশ, ২০২২ সালে যার কপালে জুটেছিল ‘দেউলিয়া’ তকমা। তবে বছরান্তে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তারা। অনেকের মনেই প্রশ্ন: এত দ্রুত কীভাবে নিজেদের অবস্থার উন্নতি ঘটাল দ্বীপরাষ্ট্রটি।


করোনা মহামারির পর থেকে শ্রীলঙ্কার পর্যটন খাতে ব্যাপক ধস নামে। এতে দেখা দেয় চরম অর্থনৈতিক সংকট। একপর্যায়ে ‘দেউলিয়া’ তকমা পাওয়া শ্রীলঙ্কা বছর না ঘুরতেই ঘুরে দাঁড়ায় অভূতপূর্বভাবে। ছবি: বিবিসি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ২০ শতাংশের ওপরে। একই বছর সেপ্টেম্বরে তা ৭০ শতাংশে ঠেকে। দেশটির অভ্যন্তরে দেখা দেয় চরম অরাজকতা। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ, চলতে থাকে টানা লোডশেডিং, জ্বালানি সংকটে স্থবির হয়ে পড়ে জীবনযাত্রা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গিয়ে ঠেকে তলানিতে।
মূলত ২০১৯ সালে গোতাবায়ে রাজাপাকসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কার অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। দেশটির নেয়া বড় বড় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এবং কীটনাশক সার ব্যবহারে বিধিনিষেধের সরাসরি প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে।
গত বছর ৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দখল নেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার পর থেকে শ্রীলঙ্কার আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাতে ধস নামে। মূল রসদ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল হিসেবে গত বছর শ্রীলঙ্কা জানায়, তারা আর বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ চলমান রাখতে পারবে না। জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালান রাজাপাকসে।
মধ্যযুগীয় নানা বিদ্রোহের পর আধুনিককালে রাজাকে রাজপ্রাসাদছাড়া করে সাধারণ জনতা রাজকীয় সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে, প্রেসিডেন্টের বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে কিংবা সংসদ সদস্যদের ধরে ধরে গণপিটুনি দিচ্ছে এমন দৃশ্য বিরল। অথচ সারা বিশ্ব গত বছর শ্রীলঙ্কায় এমন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে।
যে শ্রীলঙ্কা ২০২৬ সালের আগে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছিল, সেই বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা দ্রুতলয়ে এগোচ্ছে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের আগস্টে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশে। যেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে, করোনা এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে রীতিমতো হাঁসফাঁস করছে, সেখানে শ্রীলঙ্কার এই অগ্রগতি তাক লাগিয়েছে বিশ্বকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংস্কারনীতির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। গত বছর মার্চে আইএমএফ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বেলআউট প্যাকেজ অনুমোদনের পর থেকে নানা ধরনের সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
সম্প্রতি আইএমএফ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক উন্নতি ভালোর দিকে ধাবমান। কিন্তু এখনও দেশটিকে বড় কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অগ্রগতির ধারা চলমান রাখতে পারলে দ্রুত সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে শ্রীলঙ্কা।
দখলের পর প্রেসিডেন্টের বিছানায় শুয়ে সেলফি তুলছেন বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
তবে বিশ্লেষকরা এ-ও বলছেন, শুধু আইএমএফের শর্ত মেনে বিপদ থেকে উত্তরণ ঘটেনি শ্রীলঙ্কার; ২০১৯ সালে করোনার কারণে যে পর্যটনের জন্য ধসে পড়েছিল দেশটির অর্থনীতি, সেই পর্যটন খাতই আবার সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে।
শ্রীলঙ্কা টুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসএলটিডিএ) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ২০২ শতাংশ। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। শুধু জুলাই মাসেই দৈনিক গড়ে সাড়ে চার হাজার পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ডায়ানা গামাগে জানান, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান কারণ পর্যটন শিল্পের বিকাশ। যেভাবে দেশটির পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং বিকাশ ঘটছে, তাতে এ শিল্পের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে দেশটি।
দেশটির সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যাওয়া পর্যটকরা এখন শ্রীলঙ্কামুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে দেশটির মূল্যস্ফীতি এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দেশটির পর্যটন খাত। এই খাতকে কাজে লাগিয়েই শ্রীলঙ্কা হৃত জৌলুস ফিরে পেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) শ্রীলঙ্কার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর উৎসব কুমার জানান, উন্নতির পথে হাঁটছে শ্রীলঙ্কা। দেশটি তার প্রধান প্রধান সমস্যা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সমাধানকল্পে কাজ করছে। যদিও এখনই কিছু হলফ করে বলা যাচ্ছে না। সংকট সমাধানে শ্রীলঙ্কাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে অনেক বিশ্লেষকের ভাষ্য: শ্রীলঙ্কা যেভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনে দিনকে দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তা অনেক দেশের জন্য দৃষ্টান্ত। ঠিকভাবে নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়ে চলতে পারলে দেশটি সংকট উত্তরণে মাইলফলক অর্জন করতে পারবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ২০ শতাংশের ওপরে। একই বছর সেপ্টেম্বরে তা ৭০ শতাংশে ঠেকে। দেশটির অভ্যন্তরে দেখা দেয় চরম অরাজকতা। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ, চলতে থাকে টানা লোডশেডিং, জ্বালানি সংকটে স্থবির হয়ে পড়ে জীবনযাত্রা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গিয়ে ঠেকে তলানিতে।
মূলত ২০১৯ সালে গোতাবায়ে রাজাপাকসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ধীরে ধীরে শ্রীলঙ্কার অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। দেশটির নেয়া বড় বড় অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প এবং কীটনাশক সার ব্যবহারে বিধিনিষেধের সরাসরি প্রভাব পড়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে।

গত বছর সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার পর থেকে শ্রীলঙ্কার আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন খাতে ধস নামে। মূল রসদ বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং একের পর এক ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল হিসেবে গত বছর শ্রীলঙ্কা জানায়, তারা আর বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ চলমান রাখতে পারবে না। জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালান রাজাপাকসে।
মধ্যযুগীয় নানা বিদ্রোহের পর আধুনিককালে রাজাকে রাজপ্রাসাদছাড়া করে সাধারণ জনতা রাজকীয় সুইমিংপুলে সাঁতার কাটছে, প্রেসিডেন্টের বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে কিংবা সংসদ সদস্যদের ধরে ধরে গণপিটুনি দিচ্ছে এমন দৃশ্য বিরল। অথচ সারা বিশ্ব গত বছর শ্রীলঙ্কায় এমন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছে।
যে শ্রীলঙ্কা ২০২৬ সালের আগে আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে ধারণা করা হচ্ছিল, সেই বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা দ্রুতলয়ে এগোচ্ছে ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে। আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি ২০২৩ সালের আগস্টে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশে। যেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে, করোনা এবং রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে রীতিমতো হাঁসফাঁস করছে, সেখানে শ্রীলঙ্কার এই অগ্রগতি তাক লাগিয়েছে বিশ্বকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংস্কারনীতির একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। গত বছর মার্চে আইএমএফ ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার বেলআউট প্যাকেজ অনুমোদনের পর থেকে নানা ধরনের সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
সম্প্রতি আইএমএফ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক উন্নতি ভালোর দিকে ধাবমান। কিন্তু এখনও দেশটিকে বড় কিছু সংস্কারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অগ্রগতির ধারা চলমান রাখতে পারলে দ্রুত সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে শ্রীলঙ্কা।

তবে বিশ্লেষকরা এ-ও বলছেন, শুধু আইএমএফের শর্ত মেনে বিপদ থেকে উত্তরণ ঘটেনি শ্রীলঙ্কার; ২০১৯ সালে করোনার কারণে যে পর্যটনের জন্য ধসে পড়েছিল দেশটির অর্থনীতি, সেই পর্যটন খাতই আবার সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে।
শ্রীলঙ্কা টুরিজম ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসএলটিডিএ) দেয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জুলাই মাসের তুলনায় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কায় পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে ২০২ শতাংশ। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই দেশটিতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
২০২৩ সালের প্রথম সাত মাসে প্রায় ৮ লাখ পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেছেন। শুধু জুলাই মাসেই দৈনিক গড়ে সাড়ে চার হাজার পর্যটক শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করেন।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ডায়ানা গামাগে জানান, শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান কারণ পর্যটন শিল্পের বিকাশ। যেভাবে দেশটির পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং বিকাশ ঘটছে, তাতে এ শিল্পের মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে দেশটি।
দেশটির সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাশিয়া, ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যাওয়া পর্যটকরা এখন শ্রীলঙ্কামুখী হচ্ছেন। বিশেষ করে দেশটির মূল্যস্ফীতি এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দেশটির পর্যটন খাত। এই খাতকে কাজে লাগিয়েই শ্রীলঙ্কা হৃত জৌলুস ফিরে পেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) শ্রীলঙ্কার ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর উৎসব কুমার জানান, উন্নতির পথে হাঁটছে শ্রীলঙ্কা। দেশটি তার প্রধান প্রধান সমস্যা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে এবং সমাধানকল্পে কাজ করছে। যদিও এখনই কিছু হলফ করে বলা যাচ্ছে না। সংকট সমাধানে শ্রীলঙ্কাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে অনেক বিশ্লেষকের ভাষ্য: শ্রীলঙ্কা যেভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে এনে দিনকে দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তা অনেক দেশের জন্য দৃষ্টান্ত। ঠিকভাবে নিজেদের পরিকল্পনা সাজিয়ে চলতে পারলে দেশটি সংকট উত্তরণে মাইলফলক অর্জন করতে পারবে।
সূত্র: সময়
Tags
world news