সংসদে কপিরাইট বিল পাশ

অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামীয় কাজের স্বত্বাধিকারীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে জাতীয় সংসদে কপিরাইট বিল-২০২৩ পাশ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কপিরাইটের মেয়াদ হবে ৬০ বছর। ২০০০ সালের কপিরাইট আইন বাতিল করে নতুন এই আইনটি করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাশের জন্য উত্থাপন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বাছাই কমিটিতে প্রেরণ, জনমত যাচাই ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়।

পাশ হওয়া বিলে প্রকাশনা, চলচ্চিত্র, ডিজিটাল কাজ, নাটক, লোককাহিনি, শিল্পকলা এবং অডিও রেকর্ডিংয়ের মৌলিক কাজের অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে। বিলে অজ্ঞাতনামা বা ছদ্মনামীয় কর্মের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, একক বা যৌথভাবে রচিত ও ছদ্মনামে প্রকাশিত কোনো কর্মের ক্ষেত্রে প্রণেতার পরিচয় প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত প্রণেতা অথবা তার আইনানুগ প্রতিনিধি।

বিলে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল কর্মের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতির মাধ্যমে যে মেধাসম্পদ তৈরি হয়, তার আইনগত স্বীকৃতি ও সুরক্ষার জন্য কপিরাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গত দুই দশকে প্রযুক্তির অসামান্য উন্নতির প্রেক্ষাপটে মেধাস্বত্বের ব্যবহার ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বহুগুণ বেড়েছে এবং পাইরেসি বৃদ্ধির কারণে মেধাসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সুরক্ষায় বিদ্যমান কপিরাইটের অধিকতর সংশোধন করা প্রয়োজন হওয়ায় বিলটি আনা হয়েছে।

এর আগে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদের অর্থনীতি শক্তিশালী। কিন্তু উদারতন্ত্রের অর্থনীতি এখানে দেখছি না। ১৫ বছর এ সরকার ক্ষমতায় আছে, কিন্তু সাংস্কৃতিক বিপ্লব দেখলাম না। ঢাকা শহরের একটা অংশ কালচারাল হেরিটেজ হওয়ার কথা ছিল, কালচারাল ক্যাপিটাল হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি। উপজেলা পর্যায়ে সংস্কৃতির জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। কালচারাল বিপ্লবের জন্য বরাদ্দ নেই। এর দায়ভার এক সময় বাংলাদেশকে, এ সরকারকে নিতে হবে।

বাংলাদেশে গণহারে পাইরেসি হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি ফটোকপির দোকানে দেখা যায়, কারও না কারও বই অনুমতি ছাড়া কপি হচ্ছে। এর সুবিধা আছে ছাত্ররা কম টাকায় বই পায়। তবে আন্তর্জাতিক দায় রয়ে গেছে। একটা সময় বাংলাদেশকে এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে যে, এই পাইরেসির বিষয়ে সরকার কী করেছে।

সিনেমা হারিয়ে যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের সিনেমা আসছে না-এমন মন্তব্য করে শামীম হায়দার বলেন, এক্ষেত্রে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রক্ষাকর্তা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। সেখানে মানসম্পন্ন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, নাটক হচ্ছে। কিছু সমালোচনা আছে, অশ্লীলতা আছে, নিয়ন্ত্রণের কিছু প্রয়োজন আছে। কিন্তু সাবলীলভাবে তারা একের পর এক সিরিজ করে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বিভিন্ন সংস্থা করছে। এগুলো করার মাধ্যমে সৃজনশীলতা লোপ পেতে পারে। সিনেমা বানানোর সময় যদি মাথায় থাকে সেন্সর বোর্ড এ জিনিসগুলো করবে, তখন সৃজনশীলতা থাকে না।

জিয়ার আমলের আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধুর আদেশ পুনর্বহালে বিল পাশ : জিয়াউর রহমানের সময় প্রণীত আইন বাতিল করে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলের বাংলাদেশ বিমান অর্ডার পুনর্বহাল করতে বাংলাদেশ বিমান অর্ডার ১৯৭২ পুনর্বহাল ও সংশোধন বিল পাশ হয়েছে। এটি ভূতাপেক্ষভাবে ২০০৭ সালের ১১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাশের জন্য উত্থাপন করেন বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাশ হয়। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, কোনো প্রকার মৌলিক পরিবর্তন না করেই তৎকালীন সামরিক সরকার ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বিমান করপোরেশন অর্ডিন্যান্স দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে প্রণীত বাংলাদেশ বিমান অর্ডার বাতিল করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে প্রণীত সব আইন তার রাজনৈতিক দর্শন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পৃক্ত বিধায় ওই আদেশটি পুনর্বহালসহ সংশোধন করে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিল পাশের সময় জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, ‘বিমানে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু বিমান খালি যায়। বিমানবন্দরে মিষ্টি খেতে টাকা চাওয়ার অভিযোগ আসছে। এটা তো হতে পারে না। বাংলাদেশ বিমান দেশের ইমেজ। সারা পৃথিবীতে ৮০ লাখ বাংলাদেশি আছে। তারা বাংলাদেশ বিমানকে প্রথম পছন্দ হিসাবে দেখতে চায়। টিকিটের দাম অনেক বেশি, হয় টিকিট পাওয়া যায় না, সিট পাওয়া যায় না, খালি যায়, ফেরত আসার অনেক ক্ষেত্রে লস খায়।’

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, প্রবাসে আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে আছে। অনিয়ম-বৈষম্যের কারণে তারা দেশে আসতে চায় না।

জবাবে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, এক সময় ছিল বিমানের টিকিট পাওয়া যেত না। এখন সে অবস্থা নেই। এখন অনলাইনে টিকিট বিক্রি হয়। বিমান এখন লাভে চলছে।

সূত্র: যুগান্তর
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال