একবসায় কয়টা আম খেতে পারবেন? শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নাকি একবার ৪৮টি খেয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন ৫০। কারও মতে ৬৭। মাওলানা ভাসানী একবারে মোটামুটি ১৪-১৫টি আম খেতে পারতেন। তাঁরা বিখ্যাত মানুষ বলে হয়তো এগুলো গল্পের মতো ছড়িয়েছে যুগের পর যুগ। কিন্তু বহু আমপ্রিয় বাঙালি আছেন যাঁরা গন্ডায় গন্ডায় আম খেতে পারেন। বাঙালির আম খাওয়ার গল্প বিশ্বজুড়েই বিদিত। হবে নাই বা কেন! আমের মতো এমন অমৃত স্বাদের ফল গোটা দুনিয়াতেই যে খুব একটা নেই! মোগল সম্রাট বাবর নিঃসংশয়ে রায় দিয়েছেন—ফলের মধ্যে আম শ্রেষ্ঠ। আমের তুলনায় সুস্বাদু ফল আর নেই। আমের অতুল্য স্বাদের কথা কবুল করেছেন সম্রাট জাহাঙ্গীরও। আবহমান বাংলায় আমের মৌসুমে জামাই আদরের এক অনিবার্য উপকরণ এই আম। দুধ-ভাতের সঙ্গে রসাল আম, জামাইয়ের জিবে যেন স্বর্গীয় স্বাদ।
সম্ভবত যে ফলের সঙ্গে বাঙালি শিশুর প্রথম সচেতন পরিচয় ঘটে, সেটিও আম। সেই যে বর্ণপরিচয়ের প্রথম ধাপ—অ–তে অজগরটি আসছে তেড়ে, আ–তে আমটি আমি খাব পেড়ে একটু বয়স বাড়তেই—‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে আম কুড়াতে সুখ’; যে সুখের সত্যিই কোনো তুলনা হয় না। ছোটবেলায় আমের আঁটি দিয়ে ভেঁপু বাজাননি, গ্রামবাংলায় বড় হওয়া এমন কেউ নেই বোধ হয়। আমাদের জাতীয় সংগীতের সেই পঙ্ক্তিটা ঘুরছে মাথায়—‘ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে!’ কেবল বিচিত্র স্বাদে নয়, ঘ্রাণেও তো অনন্য বৈচিত্র্যে ভরা এই ফল। ও হ্যাঁ, আমের বনের প্রসঙ্গে কিন্তু আরেকটি ব্যাপারও চলে আসে। বাংলার অতীত ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আমের বন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে অস্ত গিয়েছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে শপথ নিয়েছিল যুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকার।
আম কিন্তু এই উপমহাদেশেরই ফল। প্রথম চাষ হয় ভারতে। সেও প্রায় পাঁচ হাজার আগে। ভারত, পাকিস্তান, হাইতি ও ফিলিপাইনের জাতীয় ফল আম। বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ আমগাছ।
আজ ২২ জুলাই, আম দিবস। ভারতে দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হয়। দিনটি কিন্তু আমরাও পালন করতে পারি। আম তো কতভাবেই খাই! আমের আচার, আমসত্ত্ব, আমের জুস আরও কত কী! আম দিবস উপলক্ষে আজ ভিন্ন কোনো রেসিপি কিন্তু চেষ্টা করে দেখতেই পারেন।
খবরঃ প্রথম আলো
সূত্র: ডেজ অব দ্য ইয়ার