আনন্দ–উচ্ছ্বাস আর পরিবেশনায় প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপন

রাজসভার আদলে যাত্রাপালা পরিবেশন করেন প্রথম আলোর নিজস্ব ভবনের দ্বিতীয় তলার কর্মীরা। ছবি: প্রথম আলো

ঘোষণাটি দেওয়া হয়েছিল ২০ দিন আগে—প্রতিটি তলায় হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। যেখানে পুরস্কারও থাকবে। এরপরই প্রথম আলোর ঢাকা কার্যালয়ের ১১টি তলার কর্মীরা নিজ উদ্যমে প্রস্তুতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঢাক ঢাক গুড় গুড় অবস্থা। এক তলার কর্মীরা যেন জানতে না পারেন, অন্য তলায় কী হচ্ছে। ব্যাপক প্রস্তুতি, উৎসাহ–উদ্দীপনা এবং নাচ, গান, নাটিকা, যাত্রার মধ্য দিয়ে প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপিত হয়।

আজ ৪ নভেম্বর শনিবার প্রথম আলোর ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে এক দিন আগে শুক্রবার হয়ে যায় কর্মী সম্মেলন। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে অনুষ্ঠিত হয় কর্মীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
ছড়ার তালে তালে তাঁরা জানান, তাঁদের কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের ছাড়া প্রথম আলো কতটা প্রাণহীন। ছবি: প্রথম আলো

গত ৪–৫ দিন ধরেই সিনেমা–নাটিকার ট্রেলার, পোস্টারে কে কার চেয়ে এগিয়ে থাকতে পারে—চলে সে প্রতিযোগিতা। মূলত পরিবেশনার এই প্রতিযোগিতা ছিল একেক তলার কর্মীদের মধ্যে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে মহড়া চলেছে সমানতালে। এক পক্ষের আরেক পক্ষকে একটু খোঁচা, মজার মজার উক্তি ছিল পোস্টারগুলোতে। প্রতিটি তলাকে নিজেদের মতো করে সাজিয়েছেন কর্মীরা।


১২তলার পরিবেশনা ছিল নিছক বিনোদনের, পুরোনো দিনের বাংলা চলচ্চিত্র। ছবি: প্রথম আলো

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রথম আলোর ১১টি তলায় ঘুরে ঘুরে এসব পরিবেশনা উপভোগ করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানসহ তাঁর সহকর্মীরা। প্রতিটি পরিবেশনার সময় ছিল পাঁচ মিনিট। আর এসব পরিবেশনা কারটা বেশি ভালো, তা যাচাই করতে ছিলেন চারজনের বিচারক প্যানেল—প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক, উপসম্পাদক এ কে এম জাকারিয়া, হেড অব কালচারাল প্রোগ্রামস কবির বকুল এবং বিশেষ প্রতিবেদক মানসুরা হোসাইন।
১১ তলায় ছিল অতিথিদের জন্য ২৫ পদের খাবার। ছবি: প্রথম আলো

কয়েকটি তলার পরিবেশনায় ছিল নিজেদের কাজ। ছড়ার তালে তালে তাঁরা জানান, তাঁদের কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁদের ছাড়া প্রথম আলো কতটা প্রাণহীন।

আরেকটি তলার পরিবেশনা ছিল নিছক বিনোদনের, পুরোনো দিনের বাংলা চলচ্চিত্র। পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল পুরো তলা। বের করা হয় একটি বিশেষ বিনোদন পাতা। সেখানে ছিল নায়ক–নায়িকার সাক্ষাৎকারসহ সিনেমা মুক্তি ও প্রদর্শনীর সব খবর।শুরুতেই অতিথিদের কক্ষে ঢুকার মুখে হাতে দেওয়া হয় প্রিমিয়ার শোর টিকিট। বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গান পরিবেশন, ফ্যাশন শো, নানা পদের খাবারও ছিল কারও কারও পরিবেশনায়।
পরিবেশনা দেখছেন বিচারকেরা। ছবি: প্রথম আলো

একটি প্রতিষ্ঠানে নানা ধরনের চরিত্র থাকে, ছোট ছোট ঘটনা থাকে। যেগুলো হয়তো সবাই জানে। কিন্তু এই ঘটনা বা চরিত্রগুলোকে বিশেষভাবে মজার ছলে তুলে ধরে কিছু সময়ের জন্যও কর্মীদের বিনোদন দিয়েছে বেশ কিছু বিভাগ।

একটি রাজসভায় রাজা, উজির থাকে, সঙ্গে গানের দল। ঠিক এমন আবহেই একটি রাজসভার আদলে যাত্রাপালা পরিবেশন করেন একটি তলার কর্মীরা।
৮ তলার পরিবেশনায় নেচে–গেয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিটি তলার কর্মীরাই চেষ্টা করেছেন নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে। তবে এর মধ্যে দিন শেষে সেরা বাছাই করতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে বিচারকদের।

পুরস্কার ঘোষণার সময় আনিসুল হক বলেন, সুন্দর এবং সৃজনশীল পরিবেশনা ছিল। কর্মীদের অভূতপূর্ব সাড়া ছিল। বিচারকেরাও মুগ্ধ। এতগুলো পরিবেশনা থেকে সেরা বাছাই করা তাঁদের জন্য একটু কঠিন হয়ে যায়।
সুন্দর এবং সৃজনশীল পরিবেশনা ছিল ৭ তলায়ও। ছবি: প্রথম আলো

পরিবেশনায় প্রথম হন প্রথম আলোর নিজস্ব ভবনের দ্বিতীয় তলার কর্মীরা। যেখানে বিজ্ঞাপন, সার্কুলেশন, উৎপাদন ও বিতরণ, মার্কেটিং এবং বন্ধুসভা বিভাগ রয়েছে। দ্বিতীয় হয়েছেন প্রগতি ভবনের ১৩ তলার কর্মীরা। যেখানে রয়েছে ফিচার, সম্পাদনা সহকারী, আলোকচিত্র, ক্রিয়েটিভ, গ্রাফিকস, ইংলিশ ও কম্পোজ বিভাগ।
 
দ্বিতীয় তলার কর্মীদের পরিবেশনা। আছেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন একই ভবনের ১২ তলার কর্মীরা। যেখানে বার্তা বিভাগ, বাণিজ্য বিভাগ, বিশাল বাংলা, খেলা, বিনোদন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগ কাজ করে। এ ছাড়া বিচারকদের বিবেচনায় সেরা অভিনেতা হয়েছেন প্রথম আলোর সাহিত্য পাতার ইনচার্জ আলতাফ শাহনেওয়াজ।
চতুর্থ তলার পরিবেশনাও ছিলো আকর্ষণীয়। ছবি: প্রথম আলো

ফলাফল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিজয়ীরা সবাই মিলে আনন্দে মেতে ওঠেন। হইহুল্লোড়, নেচেগেয়ে তাঁরা নিজেদের বিজয় উদ্‌যাপন করেন। পাশাপাশি একেক তলার কর্মীরা অন্যান্য তলায় গিয়ে নিজেদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন। এবার যাঁরা বিজয়ী হতে পারেননি, তাঁরা কেউ কেউ মৌন মিছিলও করেন। তবে পরিবেশনার উৎসবে বয়োজ্যেষ্ঠ থেকে নবীন—সব কর্মীই এই আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেন। আর এ পুরো আয়োজনের পেছনে ছিল মানবসম্পদ বিভাগ।

প্রথম আলোর রজতজয়ন্তী উৎসবের স্লোগান হচ্ছে ‘হারবে না বাংলাদেশ’। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও সাহসিকতার প্রত্যয় নিয়ে প্রথম আলো ২৬–এ পদার্পণ করল।

সূত্র: প্রথম আলো
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال