নওগাঁর উদাহরণ ছড়িয়ে পড়ুক দেশজুড়ে

সম্পাদকীয়

যেকোনো শিশু-কিশোরের মধ্যে থাকে অফুরন্ত সম্ভাবনা। জীবনের শুরুতেই বা অল্প বয়সে করে থাকা অপরাধের জন্য সেই সম্ভাবনা যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য শিশুবান্ধব আদালত গড়ে তোলাটা জরুরি। রাষ্ট্র এ ধরনের পদক্ষেপ নিলেও তা তেমন কার্যকর হয়নি। তবে নওগাঁর আদালতে এমন শিশুবান্ধব আদালতের যাত্রা শুরু হয়েছে, যা খুবই আশাব্যঞ্জক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত বৃহস্পতিবার নওগাঁয় প্রথমবারের মতো শিশু আইন অনুযায়ী শিশুবান্ধব পরিবেশে আলাদা এজলাসে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বড়দের মতো একই ধরনের আদালতে শিশুদের বিচার হতো, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এতে শিশুর মনস্তত্ত্বে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এর জন্য শিশু আদালতের পরিবেশ শিশুবান্ধব হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। সেই বিবেচনায় এ আদালত বসানো হয়েছে নাটোরে। সেখানে আসামি ও সাক্ষীর জন্য কোনো কাঠগড়া ছিল না। সরকারি কৌঁসুলি ও আইনজীবীদের কারও গায়ে ছিল না গাউন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের পরনে ছিল না ইউনিফর্ম। অন্য দিন বিচারক এজলাসে বসলেও এদিন নেমে আসেন নিচে। আসামি শিশুদের বসানো হয় বেঞ্চে। এজলাসের নিচে বিচারক ও আইনজীবীরা চেয়ার-টেবিল বসিয়ে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।

নওগাঁর বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি মো. মকবুল হোসেন বলেন, এখন থেকে দাগি অপরাধীদের সঙ্গে শিশুদের বিচারকাজ পরিচালিত হবে না। শিশুবান্ধব পরিবেশে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় শিশুদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোদাদাদ খান বলেন, শিশু আইন অনুযায়ী নওগাঁয় প্রথমবারের মতো শিশু আদালত সাজানো হয়েছে। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ।

আমরা জানি, ২০২০ সালে আইন সংশোধন করে দেশের সব নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালকে শিশু আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই আইনে শিশুদের জন্য আদালত কীভাবে গড়ে উঠবে, তার বর্ণনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নিয়ম কাগজেই সীমাবদ্ধ। সেই সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসেছেন নওগাঁ আদালত। এর আগে চট্টগ্রামের একটি আদালতে শিশুবান্ধব পরিবেশে এজলাস বসানো হয়েছিল। আশা করছি, অন্যান্য জেলায়ও এমন শিশুবান্ধব আদালতের সূচনা হবে। এতে শিশুরা দ্রুত সংশোধনের সুযোগ পাবে এবং নতুন করে কোনো অপরাধে যুক্ত না হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হবে।

সূত্র: প্রথম আলো
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال