দুর্নীতি, অর্থ পাচারের মামলায় পি কে হালদারের ২২ বছরের কারাদণ্ড


ভারতে গ্রেফতার হওয়ার পর পি কে হালদার। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতির দায়ে ১০ বছর ও অর্থ পাচারের দায়ে ১২ বছর, মোট ২২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদারকে (যিনি পি.কে. হালদার নামে পরিচিত)।

তার বিরুদ্ধে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্নসাৎ এবং পাচারের অভিযোগ রয়েছে।

পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ৩৪৮ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়।

আদালতের রায়ে পি কে হালদার ছাড়াও আরো ১৩ আসামিকে এই দুই মামলায় মোট সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

মূল অভিযুক্ত পি কে হালদার ভারতের একটি কারাগারে বন্দী থাকায় তিনি বা তার পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মীর আহমেদ আলম সালাম রায়ের পর সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন, “তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছিল। তবে যেহেতু কলকাতায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান, আমরা আশা করছি এই রায়ের মাধ্যমে আমরা তাকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা দ্রুত করতে পারবো।”

অভিযুক্ত বাকি আসামিদের মধ্যে চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এই আসামিদের সবাই বর্তমানে কারাভোগ করছেন। রায়ের সময় তাদের কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। পরে রায় ঘোষণা শেষে তাদের আবার কারাগারে পাঠানো হয়।

কারাগারে থাকা এই চার আসামি অবশ্য এ বছরের জুলাইয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চেয়েছিলেন।

প্রধান আসামী পি কে হালদার সহ বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

পি কে হালদার বর্তমানে ভারতের একটি কারাগারে বন্দি রয়েছেন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের মে মাসে ভারতে গ্রেফতার হন পি কে হালদার।

ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডিরেকটরেটের কর্মকর্তারা সেসময় জানিয়েছিলেন, পি কে হালদারসহ মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।

ডিসেম্বর ২০২১-এ তাকে ধরার জন্য পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২'এর মে মাসে তিনি ভারতে গ্রেফতার হন।

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করেছিলো। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

দুই বছর আগে, ২০২০ সালের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে তিনি সহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট অনুমোদন করেছিলো দুদক।

মিস্টার হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ ওঠার পর তিনি পালিয়ে যান।

মিস্টার হালদার এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

ওই চার্জশিটে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে কানাডায় এক কোটি সতের লাখ কানাডিয়ান ডলার পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছিলো।

এর আগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।

এরপর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের সাথে সম্পর্কযুক্ত ২৫ জন ব্যক্তিকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশের হাইকোর্ট।

এদের মধ্যে অভিযুক্ত ব্যবসায়ীর মা, অন্যান্য আত্মীয়স্বজন এবং তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মীও ছিলেন।

গত বছরের মে মাসে পি কে হালদারকে ভারতে গ্রেফতার করার পর থেকে তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে দুই দেশের গোয়েন্দা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে।

গত মে মাসে বাংলাদেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে ভারতের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব পি কে হালদারকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে।

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের মে মাসে ভারতের অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডিরেকটরেটের কর্মকর্তারা জানান, পি কে হালদারসহ মোট ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
২০২০ সালের নভেম্বরে ৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৬ হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগে তিনি সহ মোট ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট অনুমোদন করেছিলো দুদক। ছবি: সংগৃহীত

পি কে হালদারকে যেভাবে ফেরাতে পারে বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালে একটি বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।

সেই চুক্তির আওতায় দুই দেশ বন্দি বিনিময় করে থাকে।

এই চুক্তির স্বাক্ষরের পর ভারতের উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল।

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলায় আলোচিত নূর হোসেনকে এই আইনে ফিরে আনা হয়।

এই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বা ভারতের কোন অপরাধী আরেক দেশে লুকিয়ে থাকলে অথবা সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় কারাগারে থাকলে তাকে নিজ দেশে হস্তান্তর করা যাবে।

কিন্তু কারও বিরুদ্ধে সেই দেশে কোন মামলা বিচারাধীন থাকলে তাকে হস্তান্তর করার কোন বিধান এই আইনে রাখা হয়নি।

পি কে হালদারকে গ্রেফতারের পর তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে থাকা মামলার বিবরণসহ ভারতে অর্থ পাচারের অভিযোগও আনা হয়েছিল।

ঐ মামলার একজন কর্মকর্তা সেসময় বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালীকে জানিয়েছিলেন যে মামলাটি কলকাতার অর্থ পাচার আদালতে মামলা স্থানান্তর হবে। এরপর সেখানেই পি কে হালদারে বিচার কার্যক্রম চলবে।

সেসময় বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগতে পারে।

তবে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও এখনো মি. হালদারকে ফেরানোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال