ছবি: ইত্তেফাক
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় হাওর, খাল-ডোবাতে হাঁস পালন করে অভাবকে জয় করে ভাগ্য পালটাচ্ছেন খামারিরা। এতে কর্মসংস্থান হচ্ছে বেকার নারী-পুরুষের। এ খামারিদের সাফল্যে অন্যরাও উৎসাহিত হয়ে গড়ে তুলছেন ছোট-বড় খামার। এতে বৃদ্ধি পাচ্ছে খামার ও খামারির সংখ্যা।
এ হাঁসের মাংস ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। অপরদিকে প্রাণিজ পুষ্টির ঘাটতি পূরণসহ জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে হাঁসের খামারগুলো।
ছবি: সংগৃহীত
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার দেখার হাওরসহ ছোট-বড় প্রতিটি হাওর ও খাল-ডোবায় হাঁসের খামার রয়েছে। পাশাপাশি বাড়ি সংলগ্ন খালের উপরও হাঁসের খামার করছেন খামারিরা। এতে করে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে এর সংখ্যা।
হাঁসের খামার করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। খামারের হাঁস মূলত হাওরের জলজ কীট-পতঙ্গ, ঘাস, শামুক ও ছোট মাছসহ নানান ধরনের প্রাকৃতিক খাদ্য খায়। আর বর্ষাকালে হাওরের পানিতে এসব খাদ্য বেশি পাওয়া যায়।
ছবি: সংগৃহীত
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব বীরগাঁও, পশ্চিম বীরগাঁও, দরগাপাশা, জয়কলস, পাথারিয়া ও শিমুলবাকসহ ৮টি ইউনিয়নে হাঁসের খামার আছে প্রায় ৪০০টি।
এসব খামারে প্রায় ২ লাখ হাঁস রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ কোটি ডিম দেয় এসব হাঁস। এতে মোটামুটি ডিমের চাহিদা পুরন হয় এ উপজেলার মানুষের।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের নবিনগর গ্রামের খামারি জাবেদ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবার ৩০০টি ডিম দেওয়া হাঁস পালন করছি। এখন প্রতিদিন ১০০ হাঁস ডিম দিচ্ছে। কিছুদিন পর ডিম দেওয়ার সংখ্যা আরও বাড়বে। এখন সপ্তাহে ৮ হাজার টাকার বেশি ডিম বিক্রি করছি। হাঁসের ডিম বিক্রি করে নিজের সংসার খুব ভালোভাবেই চলছে। সংসারের খরচের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ করেও অনেক টাকা আয় করতে পারছি।
পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের খুদিরাই গ্রামের তমিজুল ইসলাম বলেন, ৫০০টি ডিম দেওয়া হাঁস কিনেছি। এখন প্রায় অর্ধেকর মতো হাঁস ডিম দিচ্ছে। আগে অন্য পেশায় থেকেও আমার আর্থিক উন্নতি হচ্ছিল না। তাই এ পেশায় এসে আমার আর্থিক সচ্ছলতা আসছে। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। হাঁসের রোগ হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কম দামে ভ্যাকসিন পাই না। পাশাপাশি হাঁস পালনে কোনো পরামর্শও তাদের থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম।
ছবি: সংগৃহীত
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুবায়ের হোসেন বলেন, হাওর এলাকায় হাঁসের খামার আর্শিবাদ হতে পারে। সম্প্রতি জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় একটা হাওরকে শুধুমাত্র হাঁস পালনে উন্মুক্ত করে রাখব। আমরা শান্তিগঞ্জে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। কোন হাওরে হাঁস পালন করতে উন্মুক্ত করা হবে সেটা কিছুদিনের মধ্যে সবাইকে জানাব। এটা বাস্তবায়নে কাজ করছি। তবে এ উপজেলায় হাঁস পালনে খামারিদের সচেতনতা কম। তাদেরকে আমরা সচেতন করতে কাজ করছি। শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস খামারিদের কম মূল্যে ভ্যাকসিন সুবিধা দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক
Tags
daily news