চিকিৎসকরা জানান, জলাতঙ্ক রোগ শুধু কুকুর কামড়ালেই হয় না। বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি মৃত্যু
বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য “জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান”।
এবারের প্রতিপাদ্যে- জলাতঙ্ক নির্মূলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা, সমতার গুরুত্ব এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ওয়ান হেলথ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
দেশে ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। আর মানুষ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবাদি পশুও এই রোগে মারা যেতো, তবে তার সঠিক পরিসংখ্যান অজানা।
২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেনি। সবচেয়ে বেশি জলাতঙ্ক রোগী পাওয়া যায় ঢাকায়। এমন পরিস্থিতিতেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস।
চিকিৎসকরা জানান, জলাতঙ্ক রোগ শুধু কুকুর কামড়ালেই হয় না। বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। তবে এই রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোনো প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজি বা শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধুতে হবে। পরে সময়মতো জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টিকা প্রয়োগের কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জলাতঙ্কে মৃত্যু। একবার জলাতঙ্ক হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। তবে প্রাণীর কামড়ের পরপর টিকা নিলে মৃত্যু ও জলাতঙ্ক রোধ করা যায়।
এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে শুধু ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৩০ জন জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, শতকের ঘর থেকে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা নিচের দিকে নামছে। ২০১৪ সালে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১০৬ জন, ২০১৫-তে ৮৩ জন, ২০১৬-তে ৬৬ জন, ২০১৭-তে ৮০ জন, ২০১৮ ও ২০১৯-এ ৫৭ জন, ২০২০ সালে ২৬ জন, ২০২১ সালে ৪০ জন, ২০২২ সালে ৪৫জন এবং এই বছরের জুন পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও আছেন।
দেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা নেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৪ সালে কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬২১ জন। আর গত বছর এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৮। এই বছরের জুন পর্যন্ত ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ জন কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ২০২২ সালে।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পরিবেশে জলাতঙ্কের প্রধান উৎস কুকুরের মধ্যে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের মাধ্যমে এরইমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় ১ম রাউন্ড, ৩৭টি জেলায় ২য় রাউন্ড এবং ৮টি জেলায় ৩য় রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে কুকুরকে প্রায় ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে, যা মানুষ ও প্রাণীদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জলাতঙ্ক বিষয়ে ঢাকার সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “জলাতঙ্ক রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তাই কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্যান্য প্রাণী কামড় কিংবা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে যদি ১৫ মিনিট সেই জায়গা ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধোয়া হয় তাহলে কিন্তু সংক্রমণের শঙ্কা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কমে যায়। আর কামড় দিলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কামড়ের জন্য তার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে, আবার কামড়ের ফলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে তাহলে টিকার সঙ্গে আরেকটি আরআইজি দিতে হবে।”
![]() |
কুকুর/প্রতীকী ছবি/ঢাকা ট্রিবিউন |
বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস আজ বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য “জলাতঙ্কের অবসান, সকলে মিলে সমাধান”।
এবারের প্রতিপাদ্যে- জলাতঙ্ক নির্মূলে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা, সমতার গুরুত্ব এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাকে ওয়ান হেলথ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করার বিষয়গুলোতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
দেশে ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২,০০০ মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। আর মানুষ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবাদি পশুও এই রোগে মারা যেতো, তবে তার সঠিক পরিসংখ্যান অজানা।
২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাতঙ্কে মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমেনি। সবচেয়ে বেশি জলাতঙ্ক রোগী পাওয়া যায় ঢাকায়। এমন পরিস্থিতিতেই পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস।
চিকিৎসকরা জানান, জলাতঙ্ক রোগ শুধু কুকুর কামড়ালেই হয় না। বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে পানিভীতি, আলোভীতি, বায়ুভীতি হলেও এর শেষ পরিণতি মৃত্যু। তবে এই রোগ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য। যদি কোনো প্রাণী, বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল, বানর, বেজি বা শিয়াল কামড় বা আঁচড় দেয়, সঙ্গে সঙ্গে সাবান পানি দিয়ে আক্রান্ত স্থান ১৫ মিনিট ধুতে হবে। পরে সময়মতো জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা নিলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
টিকা প্রয়োগের কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে জলাতঙ্কে মৃত্যু। একবার জলাতঙ্ক হয়ে গেলে মৃত্যু নিশ্চিত। তবে প্রাণীর কামড়ের পরপর টিকা নিলে মৃত্যু ও জলাতঙ্ক রোধ করা যায়।
এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে শুধু ঢাকার সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ৩০ জন জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের দেওয়া তথ্যমতে, গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, শতকের ঘর থেকে জলাতঙ্ক রোগীর সংখ্যা নিচের দিকে নামছে। ২০১৪ সালে জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১০৬ জন, ২০১৫-তে ৮৩ জন, ২০১৬-তে ৬৬ জন, ২০১৭-তে ৮০ জন, ২০১৮ ও ২০১৯-এ ৫৭ জন, ২০২০ সালে ২৬ জন, ২০২১ সালে ৪০ জন, ২০২২ সালে ৪৫জন এবং এই বছরের জুন পর্যন্ত ২৭ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও আছেন।
দেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ মানুষ কুকুরের কামড়ের চিকিৎসা নেন। পরিসংখ্যান বলছে, গত ১০ বছরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৪ সালে কুকুরের কামড় খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে রোগীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬২১ জন। আর গত বছর এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫১ হাজার ৮৯৮। এই বছরের জুন পর্যন্ত ২ লাখ ৫৬ হাজার ৮০১ জন কুকুরের কামড় খেয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ২০২২ সালে।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে পরিবেশে জলাতঙ্কের প্রধান উৎস কুকুরের মধ্যে ব্যাপকহারে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রমের মাধ্যমে এরইমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলায় ১ম রাউন্ড, ৩৭টি জেলায় ২য় রাউন্ড এবং ৮টি জেলায় ৩য় রাউন্ড ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের মাধ্যমে কুকুরকে প্রায় ২৭ লাখ ৭০ হাজার ডোজ জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে, যা মানুষ ও প্রাণীদেহে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জলাতঙ্ক বিষয়ে ঢাকার সংক্রামক ব্যধি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “জলাতঙ্ক রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। তাই কুকুর, বিড়াল কিংবা অন্যান্য প্রাণী কামড় কিংবা আঁচড় দিলে সঙ্গে সঙ্গে যদি ১৫ মিনিট সেই জায়গা ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ধোয়া হয় তাহলে কিন্তু সংক্রমণের শঙ্কা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ কমে যায়। আর কামড় দিলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিংবা হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কামড়ের জন্য তার টিকা নেওয়ার প্রয়োজন আছে, আবার কামড়ের ফলে যদি রক্তপাত হয় তাহলে তাহলে টিকার সঙ্গে আরেকটি আরআইজি দিতে হবে।”
source: bangla.dhakatribune.com
Tags
daily news