শুভ জন্মদিন ‘আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর’

 

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ  © ফাইল ছবি

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালার নাম। তিনি স্বপ্ন দেখেন আলোকিত মানুষের, সমৃদ্ধ মানুষের, উচ্চ মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষের। গড়ে তুলেছেন এত অনন্যসাধারণ ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। যার মাধ্যমে এই স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছেন, দিচ্ছেন সারাদেশে। আজ এই স্বপ্নবান মানুষের জন্মদিন। জীবনের ৮৩ বছর পার করে ৮৪ বছরে পদার্পণ করলেন।

অধ্যাপক আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালের ২৫ জুলাই কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার অন্তর্গত কামারগাতি গ্রামে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ছোটবেলা কেটেছে পাবনা, টাঙ্গাইল আর বাগেরহাটে। তাঁর মায়ের নাম করিমুন্নেসা। অল্প বয়সেই তিনি মাকে হারান। মায়ের অকালমৃত্যুতে তাঁর জীবনে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পরবর্তী জীবনের নানা লেখায় তার উল্লেখ আছে। তার পিতা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন কলেজ শিক্ষক। ১৯৫৫ সালে তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫৭ সালে বাগেরহাটের প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ১৯৬১ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বাংলাদেশের একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজসংস্কারক। তিনি ষাটের দশকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি হিসেবে পরিচিতি পান। সে সময়ে সমালোচক এবং সাহিত্য-সম্পাদক হিসাবেও তিনি অবদান রেখেছিলেন। তার জীবনের উল্লেখযোগ্য কীর্তি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, যা চল্লিশ বছর ধরে বাংলাদেশে ‘আলোকিত মানুষ’ তৈরির কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ২০০৪ সালে তিনি রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলাদেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ২০০৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০-এর দশকে তিনি টিভি উপস্থাপক হিসাবে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।

আবু সায়ীদ ১৯৬১ সালে মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি কিছুকাল সিলেট মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৬২ সালের পহেলা এপ্রিল তিনি রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবন শুরু করেন। সেখানে পাঁচ মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে যোগ দেন (বর্তমানে সরকারী বিজ্ঞান কলেজ)। এই কলেজে তিনি দু' বছর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তার বয়স ছিল মাত্র তেইশ। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বাংলা পড়াতেন।

এরপর তিনি ঢাকা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জালালউদ্দিন আহমেদের আমন্ত্রণে সেখানে যোগদান করেন। আবু সায়ীদ যখন ঢাকা কলেজে যোগ দেন তখন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও গদ্য লেখক শওকত ওসমান৷

ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তার নেতৃত্বে। সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর সম্পাদনার মাধ্যমে সেকালের নবীন সাহিত্যযাত্রাকে তিনি নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দিয়ে সংহত ও বেগবান করে রেখেছিলেন এক দশক ধরে। এ সময় কিছুকাল বাংলাদেশে টেলিভিশনে উপস্থাপনাও করেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রতিষ্ঠিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের লক্ষ্য দুইটি– ‘আজকের তরুণদের অর্থাৎ আগামী দিনের মানুষদের বড় করে তোলা’ এবং ‘তাদের সংঘবদ্ধ জাতীয় শক্তিতে পরিণত করা’। তিনি চেয়েছেন জ্ঞানের সামগ্রিক চর্চার পাশাপাশি হৃদয়ের উৎকর্ষ ও উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটিয়ে বহুসংখ্যক আলোকিত, সম্পন্ন, উদ্যমী মানুষ গড়ে তুলতে।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বলা চলে। নানা বাধা-বিঘ্ন-সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এখন সত্যিকারভাবে জাতীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’– এই মূলনীতি নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সারাদেশে প্রায় ৩০ লাখ কিশোর-তরুণকে বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত করেছে। এ ছাড়া ঢাকার বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের মূল ভবনের বিশাল গ্রন্থাগার, প্রদর্শনী কক্ষ, চলচ্চিত্র, গান ও সংগীতের আর্কাইভ বহু সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের মনের খোরাক জুগিয়ে চলেছে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগার প্রকল্প শুধু বাংলাদেশ নয়; সারা পৃথিবীতেই বিস্ময় জাগিয়েছে।


কপিঃ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস 
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال