একটি গাছের অসংখ্য পাতা,প্রতিটি পাতার মধ্যে রয়েছে বৈশিষ্ট্য। যে মানব- মনের এত বৈচিত্র্য পথও যে সেখানে বিভিন্ন হবে,তাতে সন্দেহ নেই।যদি খুবই এই বিচিত্রতার মধ্যেও একটা অদ্ভুত মিলনসূত্র দেখতে পাব।সমস্ত বিশ্বের সব অধিবাসী মিলে একটি অপূর্ব সুরলহরী সৃষ্টি করেছে,যার একটি সুর অপরটি থেকে ভিন্ন হলেও বিরোধী নয়।এই অপূর্ব মিলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে একটি সুরর- সন্মেলন।----( স্বামী ভূতেশানন্দ মহারাজ)------ অসংখ্য পথের বৈচিত্র্য আমাদের এক এক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।বিভিন্ন মত কি সত্য হতে পারে? যদি না পারে, তাহলে সব মতগুলির সম্পর্কেই তো সন্দেহ আসবে।এই সংশয় আমাদের মনকে সন্দিহান করে তোলে,সুতরাং কখনো কখনো আমরা সমস্ত মতের প্রতি একটা অবিশ্বাস বা অশ্রদ্ধার ভাব পোষন করি।কিন্ত মানুষ মতবাদের উপরে যতই অশ্রদ্ধা করুক, তার অন্তরের চাহিদার বিরাম নেই।আবহমান কাল ধরে অন্তর তাকে ক্রমাগত প্রেরনা দিচ্ছে--- তুমি এই সসীম সীমিত ক্ষুদ্র জীবনের ভিতরে আবদ্ধ থেকো না,এগিয়ে যাও।এই প্রেরণায় মানুষ চলছে।এইসব পথের এক একজন পথিকৃৎ এক একটি উজ্জ্বল জোতিষ্ক,তাঁদের জোতিতে চারিদিক উদ্ভাসিত হয়।ক্রমশঃ সেই প্রভাবের বিস্তার হতে থাকে এবং তাঁরা এক একটি দার্শনিক সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে যান।প্রশ্ন ওঠে এতগুলি সম্প্রদায়ের ফলে বিভ্রান্তি আসে না কি? বিভ্রান্তি হচ্ছে,কিন্ত এইসব সম্প্রদায় ছাড়া আমাদের অন্য গতি আছে কি?জীবনের প্রারম্ভে যখন চলতে আরম্ভ করি,পাঁচজনের অভিজ্ঞতাকে সংগ্রহ করে আমরা চলি।
এক একটি পথ বিশেষরূপে আলোকিত হয় এক এক জন লোকোত্তর পুরুষের জীবনালোকে।তাঁদের জোতিতে আকৃষ্ট হয়ে বহু পথিক তাঁদের প্রদর্শিত পথে চলতে থাকেন।তাতে কোন দোষ নেই।পথের বৈচিত্র্য আছে, এই বৈচিত্র্য আমাদের প্রয়োজন। মানবমনই হল বহু বিচিত্র। যেখানে বলি দুজনের মধ্যে অত্যন্ত মিল আছে,সেখানেও দেখি পার্থক্য। একটি গাছের অসংখ্য পাতা,প্রতিটি পাতার মধ্যে রয়েছে বৈশিষ্ট্য। যে মানব- মনের এত বৈচিত্র্য পথও যে সেখানে বিভিন্ন হবে,তাতে সন্দেহ নেই।যদি খুঁজি এই বিচিত্রতার মধ্যেও একটা অদ্ভুত মিলনসূত্র দেখতে পাব।সমস্ত বিশ্বের সব অধিবাসী মিলে একটি অপূর্ব সুরলহরী সৃষ্টি করেছে,,যার একটি সুর অপরটি থেকে ভিন্ন হলেও বিরোধী নয়।এই অপূর্ব মিলনের ফলে সৃষ্টি হ্য়েছে একটি সুর- সন্মেলন।এই মিষ্টি হচ্ছে আমাদের অন্বেষণের বিষয়।যে ভেদদৃষ্টি আমাদের বিভ্রান্ত করে সেই দৃষ্টি বিদূরিত হয়ে যাবে,আর মিলনসূত্রটি সুস্পষ্টভাবে দেখতে শিখব--- এই টি হচ্ছে বিশেষরপে জানবার কথা।
বিভিন্ন পথের লোকোত্তর পুরুষেরা যা বলে গেছেন,তাঁদের বাণীর ভিতরে আমরা এক অপূর্ব মিলনের দেখতে পাই,, বিভিন্ন ধর্মপপ্রচারকরা যাঁরা ঈশ্বর প্রেরিত বা ঈশ্বরাবতার বলে অভিহিত। মনীষীরা তাঁদের বাণী, তাঁদের উপদেশ সংগ্রহ করে মিলনসূত্রটি দেখাবার চেষ্টা করেছেন। আমাদের পার্থক্য থাকে আচার অনুষ্ঠানে,পার্থক্য থাকে ভাষায়,ঐতিহ্য। অনুভূতির মধ্যে দিয়ে অন্বেষণ করতে গেলে পাব অপূর্ব মিলনসূত্র। ।আরব দেশের একটি গল্প আছে---- কতকগুলি পথিক পিপাসার্ত হয়ে মরুভূমির ভিতর দিয়ে চলেছে।তাদের মধ্যে একজন পিপাসা শান্তির জন্য এমন একটি ফল চাইছে,যেটির সম্বন্ধে অপরজন বলছে না,ওটি নয়,অন্য একটি ফল হলে ভাল হত। প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা ফলের নাম বলল।এই নিয়ে তাদের কলহ হচ্ছে।এখন একজন বাইরের লোক তাদের বিবাদ শুনে ঝোলার মধ্য থেকে একটি ফল বের করে বললে,দেখ তো, এটা কেউ চাও কি- না? সকলে অবাক হয়ে সমস্বরে বলে উঠল,আমরা তো এটাই চাইছি! আঙুর ফলই তারা চাইছিল,ভিন্ন ভিন্ন শব্দের জন্য তাদের মতভেদ হচ্ছিল। ফলটি দেখার পর অনুভব দিয়ে বোঝা গেল ভাষার বিভেদ,প্রকাশের।শ্রীরামকৃষ্ণ একটি উপমা দিতেন: পুকুরের চারটে ঘাট আছে; হিন্দু বলছেন জল,মুসলমান বলছেন পানি, খ্রীষ্টান বলছেন ওয়াটার।ভিন্ন ভিন্ন নামে যা নিচ্ছে তা সে-ই জল- ই।নামভেদে জলের সার্থকতা কি ভিন্ন হয়ে যায়, তৃষ্ণা নিবারণের পক্ষে উপযোগী হয় না? অনুভূতির মধ্য দিয়ে গেলে আমরা মিলটি দেখতে পাই।অনুভূতিকে বিচারের আচরণের মধ্য দিয়ে,ভাষ্য টীকা- টিপ্পনীর এবং তস্য টীকা তস্য টিপ্পনীর মধ্য দিয়ে বুঝতে গেলে নানা প্রভেদ দেখতে পাই।----( জয় মা জয় ঠাকুর জয় স্বামীজী)
ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন
সংগ্রহঃ শ্রী স্বপন মহারাজ