যেভাবে জন্ম হয়েছিল আওয়ামীলীগের

 

আওয়ামী লীগের ৭১ বছর: যেভাবে জন্ম হয়েছিল দলটির

  • সায়েদুল ইসলাম
  • বিবিসি বাংলা, ঢাকা
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান

ছবির উৎস,BANGLADESH AWAMI LEAGUE

ছবির ক্যাপশান,

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আজ ৭১ বছর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে।

১৯৪৯ সালের ২৩শে জুন বিকালে ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় নতুন একটি রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে সেই দলের নাম পরিবর্তন হয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

যেভাবে গঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগের উত্থান নিয়ে একটি বই লিখেছেন লেখক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহিউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলছেন, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার পরে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিমুদ্দিন।

সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে প্রোগ্রেসিভ [উদারপন্থী) নেতারা ছিলেন, তারা তখন সেখানে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোঘলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সাথে যুক্ত হন।

তখন টাঙ্গাইলে প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ পদত্যাগ করার কারণে শূন্য হওয়া একটি উপনির্বাচনে দুই দফায় মুসলিম লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন মওলানা ভাসানী এবং শামসুল হক। কিন্তু তাদের দুজনের নির্বাচনী ফলাফলই অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

তখন তারাও এসে এই মুসলিম কর্মীদের সঙ্গে মিলে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা ভাবতে শুরু করেন। তারা একটি সভা ডাকেন। সেই সভা ডাকার প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ইয়ার মোহাম্মদ খান।

কিন্তু সেই সভা করার জন্য কোন অডিটোরিয়াম পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন কে এম দাস লেনের কাজী হুমায়ুন রশীদ তার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে সভা করার আহবান জানান।

সেখানেই ২৩শে জুন বিকালে আড়াইশো-তিনশো লোকের উপস্থিতিতে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী সেই দলের নামকরণ করা হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'।

সেই সঙ্গে পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনের নাম রাখা হয় 'নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ', যার সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী।

একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী
ছবির ক্যাপশান,

একটি জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী

যারা ছিলেন নবগঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে

নতুন দল গঠনের পর মওলানা ভাসানীকে দায়িত্ব দেয়া হয় একটি নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করার জন্য। তিনি অন্যদের সাথে পরামর্শ করে একটি কমিটি ঘোষণা করেন।

সেই নতুন কমিটির সভাপতি হলে মওলানা ভাসানী। সহ-সভাপতি হলেন আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আহমেদ আলী খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান।

সাধারণ সম্পাদক হলেন শামসুল হক।

ট্রেজারার হন ইয়ার মোহাম্মদ খান, যার মালিকানাধীন রোজ গার্ডেনে প্রথম সভার আয়োজন হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান তখন কারাগারে আটক থাকলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়।

এভাবেই প্রথম ৪০ জনের কমিটি গঠিত হয়। তবে পরবর্তীতে তাদের অনেকে আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকেননি।

পরের দিন, ২৪শে জুন আরমানিটোলা ময়দানে একটি জনসভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন মুসলিম লীগের কর্মীরা সেই সভায় হামলা করেছিলেন।

লেখক মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, ''অলি আহাদের বইতে একটি ভাষ্য পাওয়া যায় যে, রোজ গার্ডেনের সভায় কিছুক্ষণের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন এ কে ফজলুল হক। তিনি তখন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল পদ)। কিন্তু সরকারি পদে থাকার কারণে তিনি কিছুক্ষণ পরেই সেখান থেকে চলে যান।''

সূত্রঃ বিবিসি নিউজ

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال